শরবত বিক্রেতা থেকে তুরস্কের 'নতুন সুলতান' রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

 শরবত বিক্রেতা থেকে তুরস্কের 'নতুন সুলতান' রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

এরদোয়ান দ্যা চেঞ্জ মেকার 




বর্তমান সময়ে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম আলোচিত নাম রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দীর্ঘ ৯  বছর ধরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করে আসা এই ব্যক্তি শুধুমাত্র তুরস্কেরই নয়, বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলমানদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।


কিন্তু কেনই বা বিশ্বজুড়ে এরদোয়ানের এত বন্দনা? কেনই বা তার এত জনপ্রিয়তা? রাজনীতির মঞ্চে কিভাবে শুরু হয়েছিল এরদোয়ানের পথচলা?




রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জন্ম ১৯৫৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।  তার পিতা আহমদ এরদোয়ান পেশায় একজন জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন। পাঁচজন সহোদরের মধ্যে এরদোয়ান তৃতীয়। প্রাথমিক জীবনে এরদোয়ানের পড়াশোনার যাত্রা শুরু হয় একটি ইসলামিক স্কুল থেকে। এখান থেকেই কুরআনের বেশ কিছু অংশের হিফজ সম্পন্ন করেন তিনি। এছাড়াও  ইস্তাম্বুলের মারমারা বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি। 


প্রাথমিক জীবনে পরিবার থেকে নামমাত্র হাতখরচ পেতেন এরদোয়ান। ফলে নিজের খরচ চালাতে শরবত বিক্রি সহ অন্যান্য কাজ করতেন তিনি। ছোটবেলায় ফুটবল খেলার প্রতি বেশ ঝোক ছিল তাঁর। স্থানীয় একটি ক্লাবে আধা-পেশাদার ফুটবলার হিসেবেও খেলেছেন এরদোয়ান।




রাজনীতির ময়দানে এরদোয়ানের পদার্পণ ঘটে ৭০'র দশকে। ততৎকালীন সময়ে নেকমেতিন এরবাকানস ওয়েলফেয়ার পার্টির সদস্য ছিলেন এরদোয়ান। 


এই দলটির কর্মী হয়েই ১৯৯৪-১৯৯৮ পর্যন্ত প্রায় ৫ বছর তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তুরস্কের সামরিক অভ্যুত্থানের দরূণ ক্ষমতাচ্যুত হন এরদোয়ান। পাশাপাশি নিষিদ্ধ হয় তার দল ওয়েলফেয়ার পার্টি। ফলশ্রুতিতে এরদোয়ানকেও কারাবরণ করতে হয়।


কথায় বলে, কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে? দু:খ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?


কাটার আঘাতে জর্জরিত হয়েও দমে যাননি এরদোয়ান। 

এরপর ২০০১ সালের আগস্ট মাসে আবদুল্লাহ গুলকে সঙ্গে নিয়ে ইসলামপন্থী একে পার্টি গঠন করেন তিনি।

 প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে একে পার্টি। যার ফলশ্রুতিতে ২০০২ সালের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে জয়লাভ করে এরদোয়ানের দল এ কে পার্টি। এই দফায় এরদোয়ান দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে তুরস্কের ১২ তম প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এরদোয়ান। সেই থেকে টানা ৯ বছর একই পদে রয়েছেন এরদোয়ান।


২০১৬ সালে দেশটিতে আবারও সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু নিজ কর্মপন্থা ও বুদ্ধির জোরে তা নস্যাৎ করে দেন এরদোয়ান। ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এরদোয়ানের ভীত আরও মজবুত হয়।



তুরস্ক জুড়ে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি।  নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে করেন এরদোয়ান।


 সব ধর্মাবলম্বীদের নিজ-নিজ ধর্ম বিষয়ে খোলাখুলি ভাবে কথা বলতে পারার বিষয়টিকে সমর্থন করেন মি: এরদোয়ান।


ইউরোপের মত ইসলামবিদ্বেষী অঞ্চলে ইসলামের ঝান্ডা একপ্রকার একাই উড্ডীন করছেন এরদোয়ান। এরদোয়ানের সময়কালেই ১৬০০ বছরের ইতিহাস বিজড়িত মসজিদ আয়া সোফিয়া প্রায় ৮৬ বছর পর পুনরায় উন্মুক্ত হয়। পাশাপাশি নানান সময়ে ইসলামের পক্ষে তার অটল অবস্থান ও নানামুখী পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মাঝে তার জনপ্রিয়তাকে বিস্তৃত করেছে।


এতসব কারণেই নানা সংকট এবং অর্থনৈতিক মন্দার মাঝেও তুরস্কজুড়ে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্রও কমেনি। 


তুরস্কের রাজনীতিতে মুস্তাফা কামাল আতাতুর্কের পর সবচেয়ে বেশি সফল ক্ষমতাসীন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এরদোয়ানকে। এরদোয়ানকে নিয়ে নানা সমালোচনা ও বিতর্ক থাকলেও রাজনীতির ময়দানে একজন সফল ব্যক্তিত্বের খেতাবটা এরদোয়ানকে দেয়াই যায়। অসাধারণ মেধা ও মননে তুরস্কের ক্ষমতার গুরুদায়িত্ব পালন করে দেশটির মানুষের কাছে "সুলতান" উপাধী লাভ করেছেন তিনি। আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের নির্বাচনেও সব সমালোচনাকে পাশে ফেলে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হবেন এরদোয়ান! 


Post a Comment

0 Comments